সারাদেশ

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২৫ , ১২:২৭:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

গঙ্গাচড়া রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মোট ২০৩ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৩৩টি কেন্দ্রের ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মাত্র ৪টি কেন্দ্রে লোক দেখানো লটারি অনুষ্ঠিত হলেও বাকি ১৯টি কেন্দ্রে লটারি ছাড়াই এককভাবে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া ৮টি কেন্দ্রের আবেদন সম্পূর্ণ বাতিল দেখিয়ে সেখানে ১০ জন ডিলারকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিযোগ, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আর্থিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত স্বার্থের মাধ্যমে পছন্দসই ডিলার নিয়োগ করেছেন।

নিয়োগ কমিটির সদস্যদের অনেকেই স্বীকার করেছেন যে তারা কার্যত প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেননি। নিয়োগ কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও গঙ্গাচড়া প্রেসক্লাব সভাপতি সাজু আহমেদ লাল বলেন, সব গুদাম দেখা সম্ভব হয়নি, আমি শুধু কাছাকাছি কয়েকটা দেখেছি।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সমাজসেবা কর্মকর্তা মোসাদ্দেকুর রহমান বলেন, আমরা কমিটিতে আছি কিন্তু কোন ডিলারের গুদাম দেখার জন্য যাইনি এবং ক্রুটিপূর্ন আবেদনের কাগজগুলো আমি নিজে দেখিনি।
নিয়োগ কমিটির সদস্য পরিসংখ্যান কর্মকর্তা রাজিব ঘোষ বলেন, জুন ক্লোজিং এর জন্য ব্যস্ত থাকায় ডিলারের গুদাম দেখা সম্ভব হয়নি, তিনি আরও জানান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
নিয়োগ কমিটির সদস্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শায়লা জেসমিন সায়েদ বলেন, প্রশাসনিক ভাবে ২০৩ জনের মধ্যে ৮জনকে প্রথমেই বাতিল করা হয়েছে, দাপ্তরিক কাজের ঝামেলার কারনে গোডাউন সহ ত্রুটিপূর্ন কাগজ পত্র ভালো ভাবে দেখার সুযোগ হয়নি, খাদ্য অফিস সমস্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ করেছে, এ বিষয়ে আসলে বেশি কিছু বুঝিনা, নীতিমালাও আমার জানা নেই, আমি কমিটির সদস্য হিসেবে শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি।

নিয়োগ কমিটির আর এক সদস্য কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, গোডাউন পরিদর্শনে যাইনি। খাদ্য অফিসও চিঠির মাধ্যমে পরিদর্শনের জন্য জানায় নি, কমিটিতে রাখার দরকার ছিল তাই, পরিপত্র দেখা হয়নি, এ বিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তাই ভালো জানেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৩৩ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গত ১৮ আগস্ট ২০২৫ ইং ফলাফল প্রকাশের কথা থাকলেও ১৭ আগষ্ট এ আন অফিসিয়াল ভাবে ফল ফাঁস হয়ে যায়। এতে নিয়োগ নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করেন বঞ্চিত আবেদনকারীরা।
১৮ আগস্ট দুপুরে মাত্র চারটি কেন্দ্রে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হন,চৌধুরীহাট কেন্দ্র: মো. আমির আলী,ঠাকুদহ বাজার কেন্দ্র: শাহিন আলম,নোহালী ইউনিয়নের বাগডোগরা কেন্দ্র: মশিউর রহমান,বড়াইবাড়ি হাট কেন্দ্র: সামসুল আরেফিন

এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগকারী নূরুজ্জামানসহ কয়েকজন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।তারা বলেন, দ্রুত তদন্ত করে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দেয়া খাদ্য বান্ধব ডিলার নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানাই।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা উম্মে কুলসুমা খাতুন বলেন, আমি নিজেই প্রতিটি কেন্দ্রের গোডাউন পরিদর্শন করেছি। গোডাউনের স্টাম্পের ফটো কপির সঙ্গে মূল কপির মিল পেয়েছি। যদি কারো অভিযোগ থাকে তাহলে সকল অভিযোগ নিয়ে ডিসি ফুড স্যারের কাছে যান। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি করেছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, পদাধিকার বলে আমি নিয়োগ কমিটির সভাপতি। এবিষয়ে আমি একাধিক অভিযোগ পেয়েছি এবং উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে সেগুলো পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সালেহ আজিজ কে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল কাছে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ডিলার নিয়োগ পরিপত্রে উল্লেখিত, নতুন ডিলার নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত পুরান ডিলারদের মাধ্যমে কর্মসূচী পরিচালিত হবে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে উপজেলা কমিটির সাথে কথা বলেন, তারাই ব্যাখ্যা দিবেন।
খাদ্য অধিদপ্তরের ইনস্ট্রাক্টর ( প্রশিক্ষণ বিভাগ) -এর মো: সাহিদার রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আপনি পরিপত্রের বিষয়ে পরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলেন।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের চলতি দায়িত্বে থাকা আবু জাফরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আইনের কোন ব্যাত্যয় ঘটলে ক্ষতিগ্রস্থরা জেলা কমিটির সাথে যোগাযোগ করেন। আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা সেটা ঘতিয়ে দেখব।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে এই কর্মসূচির সভাপতি। অভিযোগের বিষয়ে আপনারা তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন।

আরও খবর

Sponsered content