সারাদেশ

‘ঘুষের’ বিনিময়ে জমির খাজনা কমিয়ে দেন মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা

  রংপুর প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০২৫ , ৯:২৪:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুরের মিঠাপুকুরে এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে জমির খাজনা কমিয়ে দেওয়াসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন দুইজন ভুক্তভোগী।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।

অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম আল- আমিন মিয়া। তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে যান লতিবপুর এলাকার কামরুজ্জামান। ওই জমির খাজনা বাবদ ভূমি উপ-সহকারী কর্মকতা মোট ৩৩,৭৫৯ টাকা দাবি করেন। তার মধ্যে ২৬,৫০০ টাকা দেন কামরুজ্জামান। তবে তাকে একটি রশিদে দেওয়া হয় ১,৫৬২ টাকা। অপর আরেকটি রশিদে দেওয়া হয় ১, ৮৭৯ টাকা। কিন্তু বাকি টাকার কথা বললে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকতা আল আমিন মিয়া বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ ছাড়াও তাহিয়ারপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মোকলেছুর রহমানের জমির খাজনা ৬,০৮৩ টাকা গ্রহণ করেন ওই কর্মকর্তা। রশিদে দেওয়া হয় ১০৮৩ টাকা। যা রসিদমূলে দেখানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জমির খারিজ, নামজারি, খাজনা প্রদান কিংবা রেকর্ড সংশোধন যে কাজই হোক না কেন, টাকা ছাড়া অফিসে কোনো ফাইল অগ্রসর হয় না। এখন এই ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিণত হয়েছে ঘুষ বাণিজ্যের কেন্দ্রে। যেকোনো ধরনের সেবা পেতে হলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আল- আমিনকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তার অফিসে রয়েছে দালাল চক্র। যারা নানা ধরনের সমস্যার কথা বলে সেবাগ্রহীতাদের ঘুষ দিতে বাধ্য করছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, জায়গীরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মৌখিকভাবে এক ধরনের খাজনা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রসিদে দেওয়া হয় অল্প টাকার চেক। এর বাইরে সব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভূমি কর্মকর্তা আল আমিন আমার কাছে জমির খাজনা বাবদ ৩৩,৭৫৯ টাকা দাবি করেন। তার মধ্যে আমি ২৬, ৫০০ টাকা প্রদান করি। কিন্তু আমার হাতে দুটি রসিদ ধরিয়ে দেন। একটি ১,৫৬২ টাকার অপরটি ১,৮৭৯ টাকা। তবে বাকি টাকার কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।’

আরেক ভুক্তভোগী মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘জমির খাজনা দিতে গিয়ে ভূমি কর্মকর্তা আল আমিনকে ৬,০৮৩ টাকা প্রদান করি। তিনি আমার হাতে একটি ১,০৮৩ টাকার রশিদ ধরিয়ে দেন এবং বলেন আপনার খাজনা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার রসিদের কথা বললে তিনি আর কিছুই বলেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মকতা আসলেই দুর্নীতির আখড়া। তিনি মানুষকে নয়-ছয় বুঝিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু রসিদে দেওয়া হয় অল্প টাকার চেক।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিন মিয়া বলেন, ‘এখনতো হাতে হাতে টাকা নেওয়ার কোনো কার্যক্রম নাই। আপনি যদি আবেদন করেন, আমরা জমির খতিয়ান দেখি, ঠিক আছে কি না। তারপরে এপ্রুভাল দেই। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এ বিষয়ে কথা বলতে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজমুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ঘটনার সত্যটা পাওয়া গেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও খবর

Sponsered content